Class 8 history chapter 2 long questions and answers
প্রশ্নঃ অষ্টাদশ শতকে ভারতে প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থানের পিছনে মুঘল সম্রাটদের ব্যক্তিগত অযোগ্যতাই কেবল দায়ী ছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে ভারতে প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থানের পিছনে মুঘল সম্রাটদের ব্যক্তিগত অযোগ্যতা অনেকাংশে দায়ী ছিলই, তা ছাড়াও অন্যান্য নানাবিধি কারণ ছিল।
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর খুব দ্রুত মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি নষ্ট হতে থাকে এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থানও ঘটতে থাকে । তাঁর শাসনকালের শেষের দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল । ঔরঙ্গজেবের উত্তরাধিকারীরা সেই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপরন্তু অযোগ্যতার ফলে সেই দুর্বলতাগুলো আরোও বেশি মাথাচাড়া দিয়েছিল।
সামরিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অবনতির কারণেও আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান হয়েছিল বলে মনে করা হয় কারণ অষ্টাদশ শতকের মুঘল সম্রাটরা সামরিক সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দেননি। ফলে সাম্রাজ্যের ভিতরে এবং বাইরের আক্রমণ ও আঞ্চলিক শক্তির উত্থানের মোকাবিলা করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি । শিবাজি ও মারাঠাদের আক্রমণ, নাদির শাহের নেতৃত্বে পারসিক আক্রমণ, মোহম্মদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে আফগান আক্রমণ,জায়গিরদারি ও মনসবদারি ব্যবস্থার সঙ্কট, ভূমি রাজস্বের হিসাবে গরমিলের কারণে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থা, দরবারে অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত লাভক্ষতির প্রতি বেশি মনযোগ, কৃষক বিদ্রোহ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। শাসনক্ষমতা ও কাঠামোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ঘটতে থাকে।
প্রশ্নঃ পলাশির যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ পলাশির যুদ্ধ এবং বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বক্সারের যুদ্ধ।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিশাল সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ইংরেজদের সামান্য সংখ্যক সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। ফলে বাংলায় ইংরেজদের প্রভুত্ব স্থাপনের সুবিধা হয়।
পরবর্তী সময়ে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে মির কাশিম অযোধ্যার নবাব সুজা উদদৌলা ও দিল্লীর মুঘল সম্রাট শাহ আলমকে সাথে নিয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ভারতের ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে বক্সারের যুদ্ধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ পলাশির যুদ্ধে শুধুমাত্র বাংলার নবাবের পরাজয় ঘটেছিল কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাব ও দিল্লীর মুঘল সম্রাট এবং বাংলার নবাবের পরাজয় ঘটেছিল। বাংলায় রাজনৈতিক প্রভুত্ব স্থাপনের প্রশ্নে নবাব ও ইংরেজ কোম্পানির বিবাদের অবলুপ্তি ঘটেছিল ৷ ইংরেজদের সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল । এলাহাবাদের চুক্তি অনুসারে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানি ৫০ লক্ষ টাকা লাভ করেন এবং বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন যা পরবর্তীকালে বাংলা, বিহার, উরিষ্যা তথা সারা ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।
উপরিউক্ত আলোচনায় এটাই প্রতিপন্ন হয় যে ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে পলাশি যুদ্ধের থেকে বক্সারের যুদ্ধই ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ মির কাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের ক্ষেত্রে কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসার কী ভূমিকা ছিল? বাংলায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রভাব কী হয়েছিল?
উত্তরঃ মির কাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের ক্ষেত্রে কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
প্রথমত, কোম্পানির বণিকরা ব্যক্তিগতভাবে বেআইনি ব্যবসা করত ফলে বাংলার অর্থনীতি বিশেষ সমস্যার মুখে পড়েছিল ।
দ্বিতীয়ত, কোম্পানির বণিকরা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য নবাবের প্রাপ্য রাজস্বের ঘাটতি পড়েছিল।
তৃতীয়ত, দেশীয় ব্যবসায়ীদের নবাবকে শুল্ক দিয়ে ব্যবসা করতে হত ৷ ফলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে নবাবের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
চতুর্থত, পরবর্তী ক্ষেত্রে নবাব দেশীয় বণিকদের ওপর থেকে বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেন ফলে নবাবের কোশাগার অর্থসংকটের মুখে পড়ে।
পঞ্চমত, মির কাশিম দেশি-বিদেশি সমস্ত বণিকদের দেয় শুল্ক তুলে দেন যার পরিণতি হল মির কাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরাসরি বিরোধ। বাংলায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রভাব বাংলার জনগণের কাছে একেবারেই শুভ ছিল না কারণ এই ব্যবস্থায় বাংলার অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার ছিল ব্রিটিশ কোম্পানির হাতে । কোম্পানিও বেশি করে রাজস্ব আদায়ের দিকে বেশি মনোযোগ হয়ে উঠেছিল, কুশাসন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষের দুঃখ দূর্দশা বেড়ে গিয়েছিল। ফলস্বরুপ বাংলায় দেখা দিয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
প্রশ্নঃ ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অধীনতামূলক মিত্রতার নীতি থেকে স্বত্ববিলোপ নীতিতে বিবর্তনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?
উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলপ নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলপ নীতি ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি অনুসারে ভারতীয় রাজারা কোম্পানির সঙ্গে মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ হলে বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে তাঁর রাজ্যকে রক্ষার দায়িত্ব কোম্পানি গ্রহণ করবে - এই উদ্দেশ্যে প্রত্যেক মিত্র রাজ্যকে নিজ খরচে একদল ব্রিটিশ সৌন্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক মিত্র রাজ্য অন্য কোনো বিদেশি শক্তির সঙ্গে মিত্রতা করতে পারবে না বা কোনো ইউরোপীয়কে চাকুরী দিতে পারবে না। নিজ রাজ্যের বাইরের কোনো রাজ্যের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এই নীতির প্রয়োগে হায়দরাবাদের নিজাম, অযোধ্যার নবাব, তাঞ্জোর ও সুরাটের শাসক, বরোদার গায়কোয়াড এবং পেশোয়ার দ্বিতীয় বাজিরাও প্রমুখ মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ হন। সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, হোলকর যুদ্ধ করতে গিয়ে পরাজিত হন ও মিত্রতা নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হন। রাজপুর, জয়পুর, যোধপুর পরপর চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় । মহিশূরের টিপু সুলতান এই নীতি গ্রহণে অস্বীকার করলে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। এইভাবে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রয়োগে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয় । স্বত্ববিলোপ নীতি অনুসারে কোম্পানির আশ্রিত বা সাহায্যপুষ্ট কোনো ভারতীয় রাজা নিঃসন্তান হলে তিনি কোনো দত্তক পুত্র বা পোষ্যপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন না। নিঃসন্তান অবস্থায় কোনো রাজার মৃত্যু হলে তাঁর রাজ্য সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই নীতি প্রয়োগ করে লর্ড ডালহৌসি সাতারা, নাগপুর, উদয়পুর, সম্বলপুর, ঝাঁসি, কর্ণাটক, তাঞ্জোর প্রভৃতি রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ছলে-বলে-কৌশলে প্রথমে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও তার পরবর্তীকালে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারকে ত্বরান্বিত করেছিল।
প্রশ্নঃ মুর্শিদকুলি খান ও আলিবর্দি খান-এর সময়ে বাংলার সঙ্গে মুঘল শাসনের সম্পর্কের চরিত্র কেমন ছিল?
উত্তরঃ মুর্শিদকুলি খান ও আলিবর্দি খান-এর সময়ে বাংলার সঙ্গে মুঘল শাসনের সম্পর্কের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলতে হয় মুর্শিদকুলি খানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও আলিবর্দি খানের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। বাংলার দেওয়ান হিসেবে দিল্লির মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবই মুর্শিদকুলি খানকে পাঠান । পরে বাহাদুর শাহের আমলেও মুর্শিদকুলি খান ওই পদেই বহাল ছিলেন। সম্রাট ফাররুখশিয়ারের আমলে মুর্শিদকুলি খান-এর নিয়োগ পাকাপাকি হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নিজাম পদও দেওয়া হয় মুর্শিদকুলি খানকেই। দিল্লির মুঘল শাসনের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্যই পরবর্তীকালে মুর্শিদকুলি খান বাংলার দেওয়ান ও নিজামের যৌথ দায়িত্ব পান । এককথায় বলা যায় মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বেই আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর সময়ও মুঘল সম্রাটদের সঙ্গে তাঁর খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর সেনাপতি আলিবর্দি খান বাংলার ক্ষমতা দখল করার পর সুবা বাংলার অধিকার মুঘলদের হাতে চলে যায় ৷ এই সময় মুঘল সম্রাটকে স্বীকার করা হত ঠিকই কিন্তু শাসনতান্ত্রিক কোনো খবরাখবর মুঘল সম্রাটকে জানানো হত না, নিয়মিত রাজস্ব পাঠানোও হত না । আলিবর্দি খান বাংলা-বিহার-উরিষ্যায় স্বশাসিত পৰশাসন চালাতেন।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, মুর্শিদকুলি খানের সঙ্গে মুঘল শাসনের সম্পর্ক ভালো থাকলেও আলিবর্দি খানের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। যার পরিণতিতে বাংলায় নানা সংঘাত অরাজকতার মধ্যে ব্রিটিশ কোম্পানি আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
অবশেষে, আমরা আশা করছি যে তোমরা সঠিক প্রশ্নের উত্তর পেতে সক্ষম হয়েছ।
তোমরা আমাদের Youtube Channel-এ Visit করতে পারো, সেখানে আমরা প্রথম শ্রেণী
থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল প্রশ্নের উত্তর PDF সহ দিয়ে থাকি।
Visit 👉 YouTube
যদি কারো সঠিক উত্তর পেতে কোনো রকমের অসুবিধা হয় সে আমাদের কমেন্ট করে জানাও।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtGgRpMdb9Qbja5wDJxCOnZEupbxez3hChPQzzugQCwHxPGgn2mmtpq_Y1Sa7J6onMIj6TKiHtO7-47_kjnLWvilYbU-mr5Hckyc-n-1VrwuHBA467N1eJSGSuyW8wGuMXzGlREdl5Hfad4BKhY8XsP7HTP56MgBtZx383CcpGIBRxmHtodlPiVvsa9g/w124-h47/Facebook-Logo-2005-2015.png)
0 comments:
Post a Comment
If you have any question, Please let me know.